রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
এ যাবৎ যে দুটো গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামগ্রিক অবস্থার কথা বর্ণনা করলাম তা থেকে পাঠক হয়তো সহজেই অনুমান করতে পাচ্ছেন এখানে একজন ডাক্তারের কতটুকু সেবা দেবার ক্ষমতা আছে। তার থাকার ব্যবস্থা, তার খাবার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে একটা উপযুক্ত সামাজিক ব্যবস্হা কোন কিছুই একজন অফিসারের মর্যাদার সাথে মিলেনা। এরকম একটা অবস্থায় কেউ ইচ্ছা করলেও মানসিক শান্তি নিয়ে কাজ করতে পারে না।
এ সমস্ত কেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থাটা এমন, কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ থাকে, ডাক্তারকে ওর ভিতর দিয়েই চিকিৎসা দিতে হয়। এখানে রোগীর সমস্যা বিবেচনা করে নিজের জ্ঞান খাটিয়ে কোন একটা নির্দিষ্ট বা কাছাকাছি কোন রোগ নির্ণয়ের কোন সুযোগ নেই। এভাবে রোগীর সমস্যার সাথে নিজের চিন্তাভাবনার সমন্ময় ঘটানোর চর্চা করতে না পারার করনে এক সময় আসে যে তার লব্ধ জ্ঞানই লোপ পেতে থাকে, তখন তার আর তার মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্টের মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকে না।
আরো একটা মজার ব্যাপার এখানে আছে, এসমস্ত কেন্দ্রে যারা চিকিৎসা নিতে আসে তাদের আশি নব্বই ভাগ-ই কোন রোগী না, তারা আসে ঔষধ নেবার জন্য। তারা ডাক্তারের কাছে এসে সমস্যা বলার পরিবর্তে ঔষধের নাম বলে সেগুলো দেবার জন্য। এই মুখস্ত ঔষধ লেখার জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কতটুকু প্রয়োজন আছে আমরা জানি না।
এবার আসি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রসঙ্গে। সেই আমলে সকল উপজেলা হাসপাতাল একত্রিশ বেডের ছিল। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেও একই অবস্থা। আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগ এগুলো আছে। সহযোগী হিসেবে একটা ওটি রুম আছে সেখানে আর কিছু নেই। প্যাথলজির কিছু কাজ হয় তা শুধুমাত্র রক্ত, প্রশ্রাব আর পায়খানার রুটিন টেস্ট। এ ছাড়া চিকিৎসা সহায়তা দেবার জন্য এক্স রে থেকে শুরু করে আর কিছুই নাই এমনকি অক্সিজেনও নাই। এই অবস্থার মধ্যেই আমরা চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতাম, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আমরা বাড়তি একটা সুবিধা পেতাম সেটা হলো এই, যে রোগী আমাদের কাছে জটিল মনে হতো তাকে ভর্তি করে রেখে দৈনিক দেখে দেখে আমাদের চিন্তা ভাবনার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে চিকিৎসা দিতে পারতাম, প্রয়োজনে দুইতিনজনের ভাবনা একত্রিত করে ব্যবস্থা নিতাম, তাতে আমাদের জ্ঞান চর্চার একটা সুযোগ হতো। এতে কিছু রোগীর হয়তো উপকার করতে পারতাম কিন্তু অনেক রোগিই আমাদের কাছে মারা যেতো যেখানে আমাদের শুধুমাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকতোনা, সে এক মর্মান্তিক ইতিহাস। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।